প্রাকৃতিক ঔষুধে ভরপুর বেল
সাতক্ষীরা থেকে সোনিয়া আফরোজ
মিষ্টি স্বাদের বেল খেতে খুব সুস্বাদু। বেল কেউবা খায় পুড়িয়ে আবার কেউবা খায় শরবত বানিয়ে। বেল যে খায় সে এর প্রেমে পড়ে যায়। আবার এর পাতাও শরীরের জন্য খুব উপকারী। এছাড়া ক্যান্সার রোধে, ডায়াবেটিকস, শিশুদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে, কোষ্ঠকাঠিন্য, আমাশয়, উদারাময়, আলসার, জণ্ডিস, শরীরের ক্লান্তি দূর করতে, গনোরিয়া ও শর্করা রোগ নিরাময়ে বেল ও বেলের পাতা বেশ উপকারী।
এছাড়া বেল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকে। কিন্তু পাকলে এর ভিতর কমলা বর্ণ ধারণ করে। তখন এর খোসার রঙ হলুদ হয়ে যায়। বেল গাছে রয়েছে তীক্ষ্ন কাঁটা। ছোট অবস্থায় বেল গাছে কাঁটার পরিমাণ বেশি থাকে। কিন্তু গাছ বড় হওয়ার সাথে সাথে কাঁটার পরিমাণও কমে যায়। অপরদিকে সনাতন ধর্মের মানুষ বেল ও এর পাতা পূজা অর্চনায় ব্যবহার করেন।
বেল বড় ধরণের একটি কাষ্ঠল বৃক্ষ। বেল গাছের উচ্চতা ১০-১৬ মিটার। বেল পাতা ত্রিপত্রযুক্ত ও ডিম্বাকার। এর পাতা সবুজ। এর পত্রফলকের অগ্রভাগ সূচালো ধরণের। এর ফুল হালকা থেকে সবুজ রঙের হয়। এছাড়া ফুলে রয়েছে মিষ্টি সুগন্ধ।
সাতক্ষীরা শহরের বিভিন্ন জায়গায় বেলের শরবত পওয়া যায়। সবার কাছে বেলের শরবত খুবই জনপ্রিয়। প্রচণ্ড গরমে এই শরবত খেয়ে তৃষ্ণা মেটায় অনেকে।
এ ব্যাপারে ব্রহ্মরাজপুর গ্রামের বাসিন্দা অঞ্জলী মণ্ডল বলেন, “আমরা প্রত্যেক পূজায় বেলের ফল ও পাতা ব্যবহার করি। এটাকে আমরা শ্রীফল বলে চিনি। আমরা মনে করি বেল কাঠ খুবই পবিত্র। তাই আমরা এই কাঠ জ্বালানি হিসেবে পোড়ায় না।”
একই গ্রামের বাসিন্দা মো. কফিল উদ্দীন বলেন, “বেলের শরবত এই গরমে দেহের ক্লান্তি দূর করতে বেশ উপকারী ভূমিকা পালন করে। বেলে রয়েছে থায়ামিন ও রিবোফ্লাডিন যা মানুষের হৃদপিণ্ড ও লিভার ভালো রাখে। বেলের শরবত হজমক্রিয়া বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। এছাড়া এটি মানুষের শরীরে পানি জমা রোগ প্রতিরোধ করে।”
খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার শ্রীকণ্ঠপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. আফায উদ্দীন বলেন, “বেল পাতা পানিতে ভিজিয়ে সেই পানিতে গোসল করলে গায়ের দূর্গন্ধ দূর হয়। এর শেকড় অর্শ্ব রোগ নিরাময়ে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। বেল পাতার রস এক চামচ খেলে সর্দি ও বাতজ্বরের উপশম হয়। কানে ব্যথা করলে বেল পাতা ও তিলের তেল জ্বালিয়ে ড্রপারে করে কানে দিলে ভালো উপকার পাওয়া যায়।”
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমানুল্লাহ আল হাদী বলেন, “বেলের শরবত ব্রেস্ট ক্যান্সার ও মলাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। বেল গাছের ছাল ও ডালে এক ধরণের আঠা থাকে যা ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে ভালো কাজে দেয়।”
তিনি আরও বলেন, “থাইরয়েড রোগী ও গর্ভবতী মহিলাদের বেল খাওয়া উচিত নয়। কারণ এতে তাদের শারীরিক জটিলতা আরও বেড়ে যেতে পারে।”
মুক্তকোষ উইকিপিডয়ার তথ্যমতে, ‘বেলের জন্ম ভারতবর্ষে। তবে এটি বাংলাদেশ ও ভারতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। বেল Rutaceae (রুটাসী) গোত্রের অর্থাৎ লেবু পরিবারের সদস্য। এর বৈজ্ঞানিক নাম Aegle marmelos। ইংরেজিতে একে Wood Apple বলে ডাকা হয়। কারণ বেলের খোসা কাঠের মতো শক্ত।
বেল একটি পুষ্টিকর ও উপকারী ফল। কাঁচা বা পাঁকা দুটোই উপকারী। কাঁচা বেল ডায়রিয়া ও আমাশয় রোগে বেশ উপকারী। বেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, এ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও পটাশিয়ামের মতো মূল্যবান পুষ্টি উপাদান। বেল পাতার রস, মধু ও গোল মরিচের গুড়া একসাথে মিশিয়ে খেলে জ-িস রোগ নিরাময় হয়।
সনাতন ধর্মালম্বীদের শিবপূজায় ত্রিনয়নের প্রতীক হিসেবে বেলের পাতা ব্যবহৃত হয়। এর পাতা ও খোসায় সুগন্ধি তেলও পাওয়া যায়। এছাড়া বেল গাছের ছাল Celebes দেশে মাছ মারার বিষ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।’
বেল ও এর পাতা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। প্রাকৃতিক ওষুধ বেলের ব্যবহার বাড়িয়ে বাজারের কৃত্রিম ওষুধের ব্যবহার কমানো সম্ভব।